আয়লা নদীআয়লা নদী, আয়লা ও চাঁদখালির নিকট দিয়ে বিঘাইর সাথে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে পতিত হয়েছে। কথিত হয়, ত্রয়োদশ শতকের মধ্যভাগে এনদীর তীরে আয়জল খান নামক এক দরবেশ একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।মসজিদ নির্মাণের পর এখানে লোকসমাগম বাড়তে থাকে এবং ক্রমশ এলাকাটি গঞ্জে পরিণত হয়। দরবেশের নামানুসারে নদীর নাম রাখা হয় আয়জলখা, যা ক্রমশ পরিবর্তনের মাধ্যমে আয়লা নামে স্থিতি লাভ করে। আবার অনেকে মনে করেন, আয়লা শব্দের অর্থ শুশুক। নবম শতকের দিকে আয়জল খাঁ নামের এক মুসলিম সাধক সূদর ইরাক হতে শুশুকের পিঠে চড়ে মালদ্বীপ যান। দরবেশ মালদ্বীপ হতে আইলার পিঠে চড়ে আলোচন্য নদী দিয়ে এলাকায় প্রবেশ করে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। আইলায় চড়ে এসেছিলেন বলে নদীটির নাম হয় আইলা বা আয়লা। উল্লেখ্য, মালদ্বীপের দিবেহী ভাষায় এখনও 'আইলা' শব্দ দিয়ে ডলফিন বা শুশুকজাতীয় জলচর প্রাণী প্রকাশ করে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর আরও অনেক দেশের আদি আঞ্চলিক ভাষায় ‘আয়লা’ বা ‘আইলা’ শব্দটি ডলফিন বা শুশুক বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেকে মনে করেন, আয়লা শব্দের স্থানীয় অর্থ ছিল আসিলেন বা আইলেন। দরবেশ নদীপথ দিয়ে এসেছিলেন। তাই এর নাম হয় আয়লা। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রবাদ হচ্ছে, এ নদীতে একসময় আইলা বা আয়ইলা বা শুশুক দেখা যেত। তাই নদীটির নাম আয়লা।
মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
আয়লা নদীর নামকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন
আড়িয়াল খাঁ নদের নামকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন
আড়িয়াল খাঁ নদ
এটি পদ্মা নদীর একটি প্রধান শাখা। উনিশ শতকের শেষ দিকে আড়িয়াল খাঁ ছিল প্রধান ধারা। বর্তমানে এর শেষ প্রান্ত পলি ভরাট হয়ে মাদারিপুরের কাছে আড়িয়াল খাঁ দুটি শখায় বিভক্ত হয়েছে। বাঁ দিকের প্রবাহিত অংশ আড়িয়াল খাঁ। আর ডান দিকে টরকি নামে প্রবাহিত হচ্ছে। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে ঠগি দমনের লক্ষ্যে সরকার, আড়িয়াল খাঁ নামক এক জমাদার নিয়োগ করেন। তিনি যোগাযোগের সুবিধার্থে ভুবনেশ্বর নদ হতে একটি খাল খনন করে প্রাচীন পদ্মার দক্ষিণাংশের সাথে যুক্ত করে দেন। এ খালটি কালের পরিক্রমায় জলপ্রবাহের কারণে প্রবল রূপ ধারণ করে। তাই তার নামানুসারে এর নাম হয় আড়িয়াল খাঁ নদ। আড়িয়াল খাঁ গতিপথে নড়িয়ার খাল, পালং খাল, ভুবনেশ্বর, ময়নাকাটা, কুমার, কাইলা, নয়াভাঙনী প্রভৃতি নদ-নদীর মাধ্যমে পদ্মা নদীর সাথে সংযোগ রক্ষা করে চলেছে। বর্তমানে সমুদ্রগামী পদ্মার শাখাগুলোর মধ্যে মধুমতী ও আড়িয়াল খাঁ নদ দুটি প্রধান। পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ ঘাট থেকে প্রায় ৫১.৫ কিমি দক্ষিণ-পূর্বের পদ্মা থেকে এই শাখা নদ (আড়িয়াল খাঁ) প্রবাহিত হয়ে ফরিদপুরও মাদারিপুর জেলার মধ্য দিয়ে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পূর্বভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তেঁতুলিয়া চ্যানেলে ঢুকেছে। নদের গতিপথ প্রায়ই আঁকাবাঁকা। নদটি ভাঙনপ্রবণ। এর ফলে অনেক জনপদ এর গর্ভে বিলীন হয়েছে। এই নদীর তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো পিঁয়াজখালী, চৌধুরীহাট, উৎরাইল, দত্তপাড়া, কবিরাজপুর, লতিখোলা, ছবিপুর, মাদারিপুর পৌরসভা, ঘসেরহাট বন্দর। আড়িয়াল খাঁ নদটি সারা বছর নাব্য। মার্চ-এপ্রিলে পানির প্রবাহ কম থকে। তবে বর্ষাকালে পানি প্রবাহ বেশি থাকে। তখন জুলাই-আগস্ট মাসে প্রবাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ঘনমিটার/সেকেন্ড। এ সময় নদে পানির গভীরতা ১২ মিটার পর্যন্ত থাকে। নদটির মোট দৈর্ঘ্য ১৬৩ কিমি। মাদারীপুর পর্যন্ত স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটার পরিসর ০.৩২ মিটার। প্রস্থ ৩০০ মিটার। নদটির অববাহিকার আয়তন ১৪৩৮ বর্গ কিমি।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যসমূহ (Atom)