সূত্র : তিলোত্তমা হাতিয়া : ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ড. মোহামম্মদ আমীন। উল্লেখ্য ড. মোহাম্মদ আমী ছিলেন হাতিয়া উপজেলার উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট। উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন তিনি গ্রন্থটি রচনা করেন।আমার এ প্রবন্ধটি ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা তিলোত্তমা হাতিয়া : ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থের ‘হাতিয়ার নামকরণ’ শিরোনামের তৃতীয় অধ্যায় হতে প্রায় অবিকল তুলে ধরা হয়েছে। ড. মোহাম্মদ আমীন হাতিয়ার প্রথম ইতিহাসের লেখক। তারপূর্বে কেউ হাতিয়ার ইতিহাস লিখেননি। এবার দেখা যাক, তিনি হাতিয়ার নামকরণ সম্পর্কে কী লিখেছেন।হাতিয়ার নামকরণ সম্পর্কে একাধিক প্রবাদ প্রচলিত আছে। প্রবাদগুলো যেমন মজার তেমন আকর্ষণীয়। ঐতিহাসিক তথ্য ও বাস্তবতা সমৃদ্ধ প্রবাদ-উপখ্যানগুলো সংশ্লিষ্ট প্রবক্তরা গ্রহণযোগ্য করার প্রয়াসে যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যাও সংযুক্ত করেছেন। কেউ কেউ প্রবাদগুলোকে নিছক গাল-গল্প মনে করলেও অধিকাংশ লোকই বাদগুলো সত্য বলে মনেকরেন। হাতিয়ার নামকরণ প্রবাদের দুটি প্রধান ধারা লক্ষণীয়- তৎমধ্যে একটি ‘হাটিয়া’ এবং অন্যটি ‘হাতি’ প্রবাদ নামে খ্যাত। এছাড়া আরও একাধিক প্রবাদ শোনা যায়। নামকরণ প্রবাদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন প্রবাদ ‘হাটিয়া’ প্রবাদ হলেও অধিকাংশ লোক ‘হাতি’ প্রবাদ এর সমর্থক। কতিপয় প্রবাদ দৃষ্টে পঞ্চদশ এবং ষোড়শ শতকে হাতিয়া নামকরণ হয়েছে বলে দেখা যায়। কিন্তু আধুনিক গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, হাতিয়ার নামকরণ অবশ্যই ১৫০ খ্রিস্টাব্দ বা তার পূর্বের। ১৫০ খ্রিস্টাব্দে টলেমির বিবরণে হাতিয়ার উল্লেখ আছে (কাজী মোজাম্মেল হক বিরচিত তিন হাজার বছরের নোয়াখালী গ্রন্থের ৫ম পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি)। তাই হাতিয়ার নামকরণ বিষয়ে ১৫০ খ্রিস্টব্দের পরের প্রবাদগুলো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
প্রবাদমতে হাতিয়ার প্রাচীন নাম ছিল সাগরদ্বীপ, যার অপভ্রংশ সাগরদীহি> সাগরদী। ইতিহাসও অনুরূপ সাক্ষ্য দেয়। খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক ২০০০-১৫০০ অব্দ পর্যন্ত দ্বীপটির কোনো নাম ছিল বলে মনে হয় না। কিরাতরা নামহীন দ্বীপটিতে এসে বসবাস শুরু করার পর আদিবাসী কিরাতরাই সর্বপ্রথম সাগর হতে সৃষ্ট সুন্দর এ দ্বীপটির নাম সাগরদ্বীপ রেখেছিল। সাগরদ্বীপ হতে সাগরদীহি পরবর্তীকালে সাগরদী নাম ও এলাকার উৎপত্তি হয়। মহাভারত যুগের পূর্বে পর্যন্ত বর্তমান হাতিয়ার সাগরদ্বীপ নাম অক্ষুণ্ন ছিল। মহাভারত যুগের প্রারম্ভকালে সাগরদ্বীপ নাম পরিবর্তিত হয়ে ‘রামচরণ’ নাম ধারণ করে। কথিত হয়, রামের প্রপিতামহ রঘু এ অঞ্চলে অনার্যদের (মহাভারতের রাক্ষসঃ আর্যরা অনার্যদের রাক্ষস, হনুমান ইত্যাদি বলত) বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সময় হাতিয়া অবস্থান করেছিলেন। রাবন সীতাকে অপহরণ করে চট্টগ্রাম (বর্তমানে সীতাকুণ্ড) নিয়ে যাওয়ার পথে নিরাপদ ভেবে কিছুদিন সাগরদ্বীপ নামক নির্জন দ্বীপটিতে আত্মগোপন করেছিলেন। রাম সীতার সন্ধানে বের হয়ে সংবাদ পান যে, সীতা সাগরদ্বীপে (হাতিয়া) আছেন। তিনি দ্রুত সাগরদ্বীপ আগমন করেন। রাম সাগরদ্বীপে এসে মাটিতে চরণ রাখার সাথে সাথে রাবন সীতাকে নিয়ে সাগরদ্বীপ (হাতিয়া) ত্যাগ করেন। রাম যেখানে চরণ রেখেছিলেন সে এলাকা পরবর্তীকালে ‘রামচরণ’ নামে খ্যাতি পায়। মহাভারত যুগ হতে শুরু করে পরবর্তী একদশক পর্যন্ত সাগরদ্বীপে রামচরণ এলাকা সাগরদী নামকে অনেকটা ঢেকে রেখেছিল। এ প্রবাদটির পক্ষে মহাভারতের আলোকে ওয়েবষ্ঠারের " The Mahabharata records a hurricane cempaign of Bhim, who exacted tribute and took precious gems of various kinds who ruled over the sea costs" এবং প্লিনির প্রেরিপ্লাস গ্রন্থের উদ্ধৃতি “tour of conquest of India by Roughu, the great grandfather of Ram, strating from Auyodna he went eastward to ocean having conquered Bangalis”প্রনিধাণযোগ্য।
শুবাচ লিংক
মানিকগঞ্জ জেলার নামকরণ ও ঐতিহ্য
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন